ব্যাংককের দর্শনীয় স্থান
ব্যাংকক শহরের মধ্যেই আছে দেখার মতো অনেক কিছু। যেমন-
গ্র্যান্ড প্যালেস :
থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে এই প্যালেস একটি অন্যতম স্থান। ১৭৮২ সাল থেকে এই প্যালেস থাইল্যান্ডের রাজা ও রয়্যাল কোর্টের সরকারি ভবন। এখানে নৌকায় করে যেতে হবে। নৌকায় যাওয়ার সময় অদ্ভুত সুন্দর ভাবে গ্র্যান্ড প্যালেসে সৌন্দর্য চোখে পড়ে।ওয়াট অরুন :
ব্যাংককের এই বৌদ্ধ মন্দির “ দ্যা টেম্পল অফ ডন ” নামেও পরিচিত। গ্র্যান্ড প্যালেসের বিপরিতে পুরো চাও ফ্রায়া নদী জুড়ে এই মন্দিরের বিস্তৃতি। এই অদ্ভুত সুন্দর স্থাপনার উপর সকালের প্রথম আলো প্রতিফলিত হয়ে এক মন্ত্রমুগ্ধ পরিবেশের সৃষ্টি করে।ওয়াট ফ্রা কাইয়ো :
এই বৌদ্ধ মন্দির থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বাসীদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মন্দির হিসেবে পরিচিত। গ্র্যান্ড প্যালেসের ভিতরে অবস্থিত ওয়াট ফ্রা কাইয়োতে এক বিশেষ ধরনের গাঢ় সবুজ বর্ণের বৌদ্ধ মন্দির আছে যা সকল পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজার :
ব্যাংককের একটি প্রধান আকর্ষণ হল ভাসমান বাজার। ব্যাংককে গিয়ে ফ্লোটিং মার্কেটে যায়নি এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাঠের নৌকায় নানা ধরনের পণ্য সাজিয়ে পানির উপর কেনাবেচা চলছে এখানে।ওয়াট ফো :
এটি আরেকটি আকর্ষণীয় বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরকেই ব্যাংককের ঐতিহ্যবাহী থাই ম্যাসাজের জন্মস্থান মনে করা হয়।লুম্ফিনি পার্ক :
ব্যাংকক শহরের কোলাহল থেকে নিরিবিলি থাকার জন্য শান্ত প্রকৃতি প্রেমিকদের ভালো লাগার মতো একটি জায়গা হল লুম্ফিনি পার্ক। এখানে ঘুরে বেরানো ছাড়াও কৃত্রিম লেকের মনোরম পরিবেশ ভালো লাগবে পর্যটকদের।চায়না টাউন বা ইয়োওয়ারাট রোড :
লোকে মুখে ব্যাংককের এই চায়না টাউনের কথা সবাই শুনে থাকবেন। শহরের মধ্যে আরেক শহর এই চায়না টাউন। এখানে আনন্দ ও মজা করার জন্য নানা বিনোদনের ব্যবস্থা আছে।ব্যাংকক জাতীয় জাদুঘর :
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম থাইল্যান্ডের এই জাদুঘর। এই জাদুঘরের সংগ্রহশালা এতই বিশাল যে কেউ ঘুরে ঘুরে দেখলে অর্ধেক দিন জাদুঘরেই কেটে যায় আর কখন যে সময় চলে যায় টেরই পাওয়া যায় না।চাটুচাক সাপ্তাহিক বাজার :
প্রায় ১৫,০০০ মতো দোকান আছে এই বাজারে। আর এখানে পাবেন নানা ধরনের শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে কেনাকাটা করার মতো অনেক জিনিস।ব্যাংকক সাফারি ওয়ার্ল্ড :
মুক্ত পরিবেশে বন্য প্রাণীদের অভয়ারন্য এই সাফারি পার্ক। তবে অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যেতে হবে তাহলেই কেবল পুরো সাফারি ওয়ার্ল্ড ভালো ভাবে দেখতে পারবেন।এছাড়াও সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন ব্যাংকক ড্রিম ওয়ার্ল্ড , ওসান ওয়ার্ল্ড, মাদাম তুসো মিউজিয়াম এর মতো জায়গা গুলোতে।
কিভাবে ব্যাংকক যাবেন
ঢাকা থেকে ব্যাংককে যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স আছে। এয়ার এশিয়া, লায়ন থাই এয়ার, নক এয়ার থেকে আপনার পছন্দ মতো যেকোন একটি বেছে নিতে পারেন। বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে, ঢাকা থেকে থাই এয়ারওয়েজে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে নামতে হবে। আবার চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকেও ব্যাংককের ডন মুয়াং এয়ার পোর্টে যাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে, চট্টগ্রাম থেকে শাহ আমানত বিমান বন্দর পৌছাতে হবে। ওখান থেকে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বা ডন মুয়াং এয়ার পোর্টে নামতে হবে। এখানে ইমিগ্রেশন শেষ করে ব্যাংকক শহর ঘুরে দেখার জন্য বের হয়ে যেতে পারবেন ট্যাক্সি নিয়ে। তবে ডন মুয়াং এয়ার পোর্টে ব্যাংককের ভিতরের ফ্লাইট বেশী চলাচল করে তাই সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টেই সবাই ব্যাংককে বেশী যাতায়াত করে।ব্যাংকক ভ্রমণ খরচ
শহরের ভিতরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যাওয়ার জন্য মেট্রো রেল, স্ক্যাই ট্রেন, নৌকা ও মোটর সাইকেল সার্ভিস বেশ ভালো। বিমানে ব্যাংকক যাওয়া ও আসা মিলিয়ে জনপ্রতি ১১০০০-১৫০০০ টাকার মতো খরচ হয়। আর বিমানের টিকেট আগে করে রাখলে ও কম খরচের মধ্যে হোটেলে থাকলে, সবমিলিয়ে এককভাবে ব্যাংকক গেলে জন প্রতি ৩৫০০০-৩৭০০০ টাকার মতো লাগবে। তবে এখানেও গ্রুপ করে গেলে থাকার, যাতায়াত ও খাবারের খরচ শেয়ার করলে মোটের উপর খরচ কিছুটা কম হবে। সেই ক্ষেত্রে ৬/৭ জন মিলে গেলে ২৭০০০-৩০০০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। তবে যার যার ব্যাক্তিগত খরচ ও শপিং খরচ আলাদা।ব্যাংককে কোথায় থাকবেন
ব্যাংককে থাকার জন্য অনেক ধরনের হোটেল আছে। তবে জায়গা হিসেবে দাম কম বেশী হতে পারে। চাও ফ্রায়া নদীর পাশে আছে বেশ কিছু হোটেল যেমন- ওরিয়েন্টাল হোটেল (এই হোটেল ব্যাংককের স্বনামধন্য হোটেলের মধ্যে অন্যতম), সাংরি লা হোটেল, পেনিনসুলা হোটেল, লেবুয়া স্টেট টাওয়ার, নোভো সিটি হোটেল। এখানে থাকার খরচ একটু বেশী তবে আশেপাশের সৌন্দর্য ও হোটেলের বাড়তি নানা সুবিধার জন্য অনেকেই এই হোটেল গুলোতে থাকতে পছন্দ করেন। দুইজনের জন্য এক রুমের ভাড়া হবে ১২০০০-১৮০০০ টাকা। আবার ব্যাংককের বাণিজ্যিক ভবনের বাইরেও বেশ কিছু হোটেল আছে যেখানে আপনি থাকতে পারেন। যেমন- সিটি লোজ ব্যাংকক, সমারসেট পার্ক, সুয়ানপ্লু, ইমারেন্ড হোটেল ইত্যাদি। এখানে ডাবল রুমের জন্য খরচ পড়বে ৪৫০০-৬০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও প্যাট পং, সোকুম্ভিত, সয় কাউবয় ও নানা প্লাজার মতো লোকেশনে ও বেশ কিছু ভালো হোটেল পাবেন। যেমন- গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট, এম্বাসেডর হোটেল ব্যাংকক। এখানকার হোটেল গুলোতে একটু দামাদামি করলে ১৫০০-২৫০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন।ব্যাংককে কোথায় কি খাবেন
ব্যাংকক শহরে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় “ম্যাকডোনাল্ড” ও “কে এফ সি” রয়েছে। আর এইসব চেইন ফুডশপে চিকেন ফ্র্যাই, বার্গার সহ পছন্দের অনেক খাবার পাওয়া যায়। ব্যাংককে অরিজিনাল চাইনিজ ও থাই খাবারের সমারোহই বেশী দেখা যায়। রাস্তার পাশে পাওয়া যায় নানা ধরনের স্ট্রীট ফুড। খাবারের নামগুলো একটু অদ্ভুত হলেও একটু ভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ পেতে খাবারগুলো খেয়ে দেখতে পারেন। যেমন- টম ইয়াং কুং ( এটা মূলত নাকিকেলের দুধ, কাঁচা মরিচ, লেমন গ্রাস, মাশরুম ও চিংড়ি দিয়ে তৈরি এক ধরনের স্যুপ), স্টিম রাইস উইথ গ্রিনহোল পিপারকর্ণ (এটা মূলত সাদা ভাতের সাথে কাঁচা পেপে, আম, লেবুর রস ও মরিচ দিয়ে তৈরি এক ধরনের সালাদ তবে সাথে গ্রিন বা রেড চিকেন কারি খেতে হবে), প্লা পাও ( মাছের বারবিকিও), খাও মুন গাই (সাদা ভাতের সাথে স্টিমড চিকেন)। এছাড়াও খেতে পারেন মাঙ্গো স্টিকি রাইস, কোকোনাট আইসক্রিম। আরো আছে নানা ধরনের জানা অজানা ফল। যেমন- রোজ আপেল, ম্যাংগোস্টিন। মেজবান ব্যাংকক, সই ১১, সিকুম্ভিট, আরব ও তুর্কি খাবার সই ৩, ৪, ৫ ও এমবিকে ( MBK) ফুড কোর্টের কিছু দোকানে হালাল ফুড পাবেন। আর বাঙ্গালি খাবার খেতে চাইলে, সিয়াম প্যারাগন থেকে স্ক্যাই ট্রেনে উঠে নানা স্টেশনে পাবেন বেশ কিছু বাঙ্গালি রেস্টুরেন্ট।কেনাকাটা: ব্যাংকক ইন্দ্রা মার্কেট( অনেকটা ঢাকার নিউ মার্কেটের মতো),এমবিকে মার্কেট (এখানে দাম একটু বেশী), চাতুচক ব্যাংকক মার্কেট, প্লাতুনাম (এখানে বেশ সস্তায় কেনাকাটা করতে পারবেন), বিগ সি, চায়না টাউন থেকে ঘুরে ঘুরে কিনতে পারবেন ব্যাংককের নানা জিনিস, বিশেষ করে ব্যাগ, স্যান্ডেল ও মেয়েদের নানা ধরনের গহনা। আবার সিয়াম সেন্টারের বিপরীতে বেশ কিছু দোকান আছে। ছেলেদের জিনিস কেনার জন্য “রবিনসন” ভালো। ব্যাংককের বিশেষ আকর্ষণ: ব্যাংককের পর্যটকদের জন্য বিশেষ স্পা-য়ের ব্যবস্থা আছে। রাতের ব্যাংককের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন চায়না টাউন, বাংলা রোড ও খাও সান রোডে। আর এডাল্টদের জন্য নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা পসরা সাজিয়ে আছে ব্যাংকক ।
ব্যাংকক ভ্রমণের কিছু টিপস: বাইরে ভ্রমনের ক্ষেত্রে মাসখানেক আগে থেকেই বিমানের টিকেট কেটে রাখা ভালো এতে খরচ কম পড়ে। অনেক সময় এয়ারলাইন্স গুলো বিভিন্ন উপলক্ষে ছাড় দিয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রেও খরচ কমানো সম্ভব। হোটেল আগে থেকেই অনলাইনে বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন। এতে আপনি সময় ও স্থান বিবেচনা করে কম দামের মধ্যে ভালোমানের হোটেল বুকিং দিতে পারবেন। ব্যাংককে মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে অনেক জায়গায় ঘোরা যায়। যা আপনার ভ্রমণ ব্যয় বেশ নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ভ্রমণের পূবেই ট্র্যাভেল ট্যাক্স জমা দিয়ে দিন। ব্যাংককের মুদ্রার নাম বাথ। আগেই ডলার বা টাকা বাথে এক্সচেঞ্জ করে নিতে হবে। তবে বিমান বন্দর থেকে এক্সচেঞ্জ না করে যদি ফুকেটে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তাহলে ফুকেটে গিয়ে ডলার বাথে কনভার্ট করলে ভালো রেট পাওয়া যাবে। সাথে ডলার নিতে চাইলে ডলার এনডোর্স করে নিয়ে যাওয়া ভালো তাহলে চেকিং এর সময় সমস্যায় পড়তে হবে না। ব্যাংকক পৌঁছে সিম কেনার সময় ইন্টারনেটের প্যাকেজ খেয়াল রাখবেন কারন দেশে যোগাযোগ করতে হলে মোবাইল ব্যালেন্সের চেয়ে ইন্টারনেটের ব্যালেন্স বেশী জরুরী। স্ক্যাই ট্রেন বা বোটে চলাচল করলে ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে খরচ কমাতে পারবেন।